‘তুই বুয়েটে যাস না, প্রয়োজনে রাজশাহী-খুলনাতে পড়’

আবরার ফাইয়াজ
আবরার ফাইয়াজ  © ফাইল ছবি

বুয়েটের আবাসিক হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মারধরে নিহত আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বুয়েটে ভর্তির মেধা তালিকায় ৪৫০তম স্থান করে নিয়েছেন। তবে বুয়েটে ভর্তি হবেন নাকি আইইউটিতে পড়বেন তা এখনো ঠিক করেননি। 

শুক্রবার (১ জুলাই) বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন আবরার ফাইয়াজ। নিচে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- 

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর ইচ্ছায় বুয়েটে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তির সুযোগ লাভ করতে পেরেছি। আসলে এখন আমাদের অনেক খুশি হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বাড়ির কারোর মুখে তেমন খুশির ছিটেফোঁটাও দেখতে পায়নি। গতকাল যে সময় আমাদের রেজাল্ট দিয়েছে ২০১৭ তেও ঠিক ওই একই সময়ে ভাইয়ার রেজাল্ট দিয়েছিল। তখন আমরা ৪ জন একই ঘরে বসেছিলাম। সাথে চাচাও ছিলো। ভাইয়ার এক বন্ধু ফোন দিয়ে ভাইয়াকে বলেছিলো যে বুয়েটের রেজাল্ট দিয়েছে। সেদিনের মতো খুশি ভাইয়াকে আর কখনো দেখিনি। আমিও সেদিন অনেক অনেক বেশি খুশি হয়েছিলাম। সত্যি বলতে সেদিনের আনন্দের ১০ ভাগও গতকাল নিজের রেজাল্ট দেখে পাইনি।

এখন পর্যন্ত আমার পরিবারের একজনও বলেনি বুয়েটে ভর্তি হতে। আসলে কারোর সেটা বলার মতো সাহস নেই। আমার দাদা, ভাইয়ার রেজাল্ট শুনে পুরো এলাকায় বলে বেরিয়েছিল। আর সে কিনা আমাকে বারবার বলছে, তুই আর বুয়েটে যাস না। দরকার হলে রাজশাহী/খুলনা ভার্সিটিতে পড়। ওরা খুব খারাপ। কোথায় পড়বো জানিনা। আইইউটিতে ৪১তম হয়েছিলাম। সিএসইতে ভর্তি আছি।

আমাদের দুই ভাইয়ের বয়স আর ক্লাস গ্যাপ ৪ বছরের। তাই ভাইয়াকে ভর্তির দিনই বলছিলাম, “তাহলে ব্যাপারটা এমন যে তুই বের হবি আর আমাদের ব্যাচ ঢুকবে ”। ভাইয়া একবার আম্মুকে বলেছিলো,“ এখানে দেখি যার বড় ভাইও পড়ে ছোট ভাইরাও বুয়েটেই আসে। তোমার ছেলে কী করবে?”

ভাইয়ার আসলে অনেক আশা ছিলো যে আমিও ভালো কোথাও ভর্তি হব। ভাইয়ার এক বন্ধুর সাথে দেখা হলে বলছিলো, “তুমি তো সাব্বির? তুমি নাকি অনেক ভালো ছাত্র। তুমি কী বুয়েটে আসবা? তোমার ভাই তো বলে তোমারো নাকি বুয়েটের ইচ্ছা?”  আমি জানিনা ভাইয়া সবসময় কেন আমাকে পড়ালেখায় ভালো ভাবতো; যেখানে আমি ভাইয়া বেঁচে থাকতে তেমন কোনো ভালো রেজাল্টই করিনি। শুধুমাত্র স্কুলের পরীক্ষা বাদে । আসলে আমার থেকে ওর ই আমার উপর বেশি ভরসা ছিল।

ভাইয়া মারা যাওয়ার পরে ভাইয়ার এক স্টুডেন্ট আর তার মা বাসায় এসে বলে, “তোমার ভাই কিন্তু তোমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করত। সবসময় বলতো তোমার কথা। তুমি কোথায় পড়বা এসব কথা সবসময় বলতো। ”

ভাইয়ার রেজাল্টের দিন ভাইয়া একটা পোস্ট দিয়েছিলো আলহামদুলিল্লাহ লিখে ফেসবুকে, আমি আবার তখন জোর করে বলেছিলাম, আমাকে ট্যাগ করতে। হয়তো আজ উল্টোটা হত। প্রথমবারের মতো ভাইয়ার খুশি হওয়ার মতো কিছু হতে পারত। কিন্তু সেটা আর হলো না।

এরপর কী করবো জানিনা এখনো। এতদিন তো শুধু ভাইয়ার দেখানো পথেই এগিয়েছি। বলা যায় ভাইয়ার দেখানো পথ এখান পর্যন্তই ছিল। এরপরের দিনগুলো কেমন হবে সেটা আর আমাকে দেখিয়ে যাওয়ার সুযোগ ভাইয়া পায়নি।

জানিনা ভাইয়া কি অবস্থায় আছে, কোথায় আছে। কিন্তু এখন যতটা মিস করি ততটা আগে কখনো করিনি।

আপনারা সবাই আমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এত ভালোবাসার যোগ্য আমরা কিনা জানিনা । আসলে আমার শিক্ষক, বন্ধু কিংবা তেমন চিনিনা এমন অনেকেও আমাদের যেভাবে গত কয়েক বছর ধরে সাপোর্ট দিচ্ছেন এটা আমাদের কাছে কতটা মূল্যবান তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। সকলের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই।


সর্বশেষ সংবাদ